শিশু বিমানযাত্রীর টেডি বিয়ার নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

মা’র সঙ্গে থ্যাংকস গিভিংয়ের ছুটি কাটাতে ডালাস থেকে নিউ অরলিন্স গিয়েছিল ছোট্ট শিশু গ্রেসন মুলিগান। হাতে ছিলো তার আদরের পুতুল টেডি। অথচ বিমান থেকে নেমেই দেখা গেল সবকিছুই ঠিকঠাক আছে, শুধু নেই টেডি।
এই ঘটনায় দারুণ মুষড়ে পরে গ্রেসন। এটা তার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, কারণ গ্রেসন আর টেডি খেলাধুলো করা, বেড়ানো সবকিছুই এতদিন একসঙ্গে করেছে। তাই ছেলের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে হন্য হয়ে টেডিকে খুঁজতে থাকেন মা ক্রিস্টিনা মুলিগান। খবর সিএনএনের।
তিনি বলেন, আমি বিমান বন্দরের হারিয়ে যাওয়া মালামাল খুঁজে পাওয়ার সব কয়টি নোটিশে খোঁজ নিয়েছি। আসলে আমি লাগেজ অনুসন্ধান অফিসেও বহুবার ফোন করি। আমি যতবারই ফোন করেছি, তারা জানতে চেয়েছেন আপনি কি সেই নারী যিনি বারবার সেই হারিয়ে যাওয়া টেডি বিয়ারের কথা জানতে চাচ্ছেন।
বিমানবন্দর কতৃপক্ষের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার এড়িয়ে যাওয়াকে অনুধাবন করে এবার ক্রিস্টিনা যে কোম্পানির উড়োজাহাজে যাত্রা করেছিলেন সেই সাউথইস্ট এয়ারলাইনসের ফেসবুক পেজেই একটি পোস্ট দেন। উদ্দেশ্য, যাতে কোনো বিমানবালা বা যাত্রী টেডিকে খুঁজে পেলে ছবি দেখে ফেরত দিতে পারে।

এতকিছু যখন হচ্ছে ক্রিস্টিনা তখনও জানতেন না নিউ অরলিন্স বিমান বন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাইন্ড সেকশন তখন অচেনা যাত্রী এবং কর্মীদের ফোনে মহাব্যস্ত। সকলেই ফোন করে একটি টেডি বেয়ারের কথাই বলছেন। সকলেই তাকে খোঁজার চেষ্টা করছেন।
এতকিছু যখন চলছে ছোট্ট গ্রেসনও কিন্তু তখন টেডি হারানোর শোকে কাতর। সে জানায়, আমি তখন টেডিকে হারানোর আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। কারণ, ওকে নিয়েই তো আমি ঘুরে বেড়াতাম।
এরপর অবশ্য একমাস পেড়িয়ে যায়। এর মাঝে টেডি কোথায় হারিয়ে যাওয়া যে গেছে তা আর জানা হয়নি ছোট্ট গ্রেসনের। এরপর ডিসেম্বর মাসের শেষে সাউথইস্ট এয়ারলাইনসের কর্পোরেট অফিসের এক কর্মী গ্রেসনের মা ক্রিস্টিনাকে ফোন করেন।
ওই কর্মী জানান তাদের একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট টেডি বিয়ারটিকে খুঁজে পেয়ে তা একজন গ্রাউন্ড ক্রুর কাছে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেদিনের পর থেকেই ওই গ্রাউন্ড ক্রুকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সাউথইস্ট এয়ারলাইনসের পেজে ক্রিস্টিনার টেডি হারানোর পোস্টটি অনেক জনপ্রিয় হয়। এর ফলে সাউথইস্টের কিছু নির্বাহীও গ্রেসনকে তার হারানো টেডি ফিরিয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গ্রেসনকে সাউথইস্ট নতুন যে টেডি বিয়ার দেয় সে কিন্তু মহা করিৎকর্মা। বিমানবন্দরের নানাবিধ কাজ করার ভঙ্গিমায় নতুন টেডির ছবি প্রকাশ করে সাউথইস্ট। সেখানে তাকে রানওয়ে পরিদর্শন, যাত্রীদের জন্য আসন ব্যবস্থাপনা এবং ফ্লাইট বুকিংয়ের কাজ করতে দেখা গেছে।

নতুন টেডির এসব গুণ দেখে গ্রেসন অবশ্য খুবই খুশি। সে টেডির নাম রেখেছে জ্যাক। নামকরণের কারণ জানতে চাওয়া হলে সে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে, আসলে ওকে দেখতে একজন জ্যাকের মতোই লাগে। বলাই বাহুল্য এমন অকাট্য যুক্তি অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। আর সাধারণ মানুষও সাউথইস্ট এয়ারলাইন্সের এমন বদন্যতাকে সামাজিক গণমাধ্যমে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়েছেন।