লকডাউনের মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে তিন দিন হাঁটার পর মৃত্যু

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যখন সারাদেশ লড়ছে, তখন করোনা নয়, দীর্ঘ পথ হাঁটার পরিশ্রমই প্রাণ কাড়ল ১২ বছরের এক কিশোরীর। বর্তমানে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রুখতে টানা লকডাউন জারি করা হয়েছে দেশে। ফলে নিজের বাড়ি থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বহু শ্রমিক। ঠিক সেই রকমই এক বিষাদের গল্প ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের ছত্তিশগড় নিবাসী এই কিশোরীর।
তবে এটা কোনো গল্প নয়, সত্যি। একবারে নির্মম এক সত্যি। জানা গেছে, তেলেঙ্গানার একটি গ্রামে মরিচের শস্যক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিল সে, লকডাউনের জেরে সেখানেই আটকে পড়ে মেয়েটি। কিন্তু ঘরে ফেরার টান উপেক্ষা করতে পারেনি কিছুতেই। তাই কোনো উপায় না দেখে ছোট্ট মেয়েটি আরও ১১ জনের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করে তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় থাকা তার বাড়ির উদ্দেশে। খবর এনডিটিভির।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে দিন-রাত এক করে হাঁটতে হাঁটতে শেষপর্যন্ত নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে মুখ থুবড়ে পড়ে সে। পথেই মারা যায় জামলো মাকদম নামের ওই কিশোরী। শুধু পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যে অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে।
যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, বইখাতার মধ্যে মুখ গুঁজে থাকার কথা, সেই সময় শস্যক্ষেতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতো সে। কিন্তু নিজের ঘর আর ঘরে ফেরার টানই অকালে প্রাণ কাড়ল তার। তবে অনেকেই বলছেন, কিশোরীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে ভিলেন আসলে করোনাভাইরাসই। কেননা করোনা সংক্রমণ রুখতেই লকডাউন চলছিল, আর তার জেরেই ঘর থেকে দূরে আটকে পড়েছিল সে।
দীর্ঘ প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সময়, খাবার বা পানি, কোনোটাই ঠিকমতো মেলেনি তার। সবাই মিলে টানা তিন দিন হাঁটে। জাতীয় সড়ক দিয়ে নয়, শর্টকাটে যাওয়ার জন্যে বনজঙ্গলের মধ্যে দিয়েই হাঁটতে থাকে তারা। জামলো যখন তার বাড়ি থেকে আর ১৪ কিলোমিটার দূরে, তখনই হঠাৎ পেটে মারাত্মক ব্যথা অনুভব করে সে। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে পথের মধ্যেই পড়ে যায়। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। জীবদ্দশায় বাড়ি ফেরার জন্যে কোনো গাড়ি না মিললেও অবশেষে, তার মরদেহ বাড়ি ফেরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে। কী দুঃসহ এই ছবি, জামলোর নিথর দেহ যখন ফিরলো গ্রামে, তখন সেখানকার প্রতিটি মানুষের চোখে জল।
কিশোরীর মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা মারাত্মকভাবে তার শরীরের ডিহাইড্রেটেড অবস্থা এবং অপুষ্টিকেই দায়ী করেছেন। 'না, ওই কিশোরীর করোনা ভাইরাস হয়নি। তার শরীরের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ ধরা পড়ে। তার শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতায় দেখা গেছে', জানিয়েছেন জেলা মেডিকেল অফিসার বি আর পূজারি।
মেয়ের বাবা অন্দরম মাকদম জানিয়েছেন, তার মেয়ে গত ২ মাস ধরে তেলেঙ্গানায় কাজ করছিল। 'সে টানা তিন দিন ধরে হেঁটেছিল। পথেই বমি এবং পেটে ব্যথা শুরু হয়।' মেয়েকে অকালে হারিয়ে পারিবারের মাথায় হাত, নাওয়া-খাওয়া ভুলে যেন পাথর হয়ে বসে আছেন কিশোরীর বাবা-মা ও পরিবারের অন্যরা। রাজ্য সরকার মেয়েটির পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছে।