বাজারে আসতে-যেতে দু’দিন লাগে যে এলাকার বাসিন্দাদের!
সিনেড মেডার একজন আদিবাসী কানাডিয়ান নারী। কানাডিয়ান-আলাস্কান সীমান্তে ইউকন শহরে তার বাস। ইউকনের সবচেয়ে নিকটবর্তী শহরটিও প্রায় ৪০০ মাইল দূরে অবস্থিত।
বিরূপ আবহাওয়া এবং দুর্গম হওয়ায় এ অঞ্চলের জনসংখ্যাও কম, মাত্র ৯০ জন!
এই হাতেগোনা মানুষের একজন হয়েও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেছেন সিনেড মেডার।
ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটকে সিনেডের ৬৭ হাজারের ওপর অনুসারী রয়েছে; প্রায়ই তাদের সাথে নিজের দুর্গম অঞ্চলে বসবাসের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সিনেড।
সিনেডের প্রকাশ করা পরপর কয়েকটি ভিডিওর মধ্য দিয়ে জানা গেছে, এই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী সুপার মার্কেটে যেতেও কীভাবে তাকে পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা করতে হয়!
ফলে সময় বাঁচাতে প্রতি পাঁচ থেকে আট সপ্তাহে একবার মাত্র সুপার মার্কেটে যান তিনি।
পেশায় পুষ্টিবিদ সিনেড জানিয়েছেন, তাকে সব সময় খাবার মজুত করে রাখতে হয়।
আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তার শহরে স্থানীয়দের বাড়িঘরের কোনো ঠিকানা নেই! শহরের একমাত্র পোস্ট অফিসের ঠিকানায় তাদের সবার মেইল আসে।
সিনেডেরও কোনো 'হোম এ্যাড্রেস' নেই; প্রতি তিন দিনে একবার তিনি পোস্ট অফিসে ঢুঁ মারেন। নির্দিষ্ট লকারে তার নামের মেইল জমা হয়ে থাকে।
মজা করে সিনেড জানান, 'আমাদের কোনো বাড়ির ঠিকানা নেই, এখানে পৌঁছানোর একমাত্র ঠিকানা ১২০২ আলাস্কান হাইওয়ে।'
এর বাইরে ইউকনে আছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি সেন্টার এবং জরুরী নার্সিং কেন্দ্র; হাসপাতালে যেতেও শহরের অধিবাসীদের লেগে যায় ঘণ্টা পাঁচেকের মতো।
তুষারে মোড়া মাইনাস ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় সিনেডদের।
একটি ক্লিপে সিনেড শেয়ার করেছেন বাজার সদাইয়ের জন্য তাকে কীভাবে ৬৭৭ মাইলের রাউন্ড ট্রিপ দিতে হয়। এই পাঁচ ঘন্টার যাত্রায় ফোন সার্ভিসও সচল থাকে না।
শীতকাল হলে তো কথাই নেই! সে অঞ্চলে দিনে সূর্যের দেখাই মেলে মোটে ঘণ্টা পাঁচেকের মতো। ফলে বাজারে যাবার দিনগুলোতে দিনের পুরোটা সময় রাস্তাতেই কেটে যায়।
সব সময়ই প্রচুর প্যাকেটজাত ও টিনজাত ফ্রোজেন ফুডের মজুত রেখে দেন এই দুর্গম, পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা।
এর ফলে তাজা ফলফলাদির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হন তারা।
সিনেড জানান, যাওয়া-আসা মিলিয়ে তারা বাজার ভ্রমণকে দুই দিনে ভাগ করে নেন। জিনিস কেনায় যতোটা না খরচ, তার চেয়ে তাদের কয়েকগুণ বেশি খরচ পড়ে যায় গাড়ির তেলে এবং হোটেলের রুম বুকিংয়ের পেছনে।
"বলা যায়, বাজার করতে গিয়ে আমরা ছোটখাটো একটা ছুটি কাটিয়ে আসি।"
সে যাত্রার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে সিনেড জানান, "একবার আলো চলে গেলে আর কিছুই পরিষ্কার দেখা যায় না। আপনার গাড়ির সামনে দিয়ে কোনো বন্যপ্রাণী দৌড়ে পার হতে পারে, তারা গাড়িচাপা পড়তে পারে। ওপাশ থেকে আসা গাড়িটিকে আপনি নাও দেখতে পারেন। কিছু কিছু এলাকায় তো আপনি ঘণ্টাপ্রতি ৩০ মাইলের ওপরে গাড়ি চালাতেই পারবেন না।"
সুতরাং একই দিনে না ফিরে রাতটা হোটেলে কাটিয়ে পরদিন আলো ফুটলে ফিরতি যাত্রা করাটাই শ্রেয় মনে করেন সিনেড। তার মতে, এটি মোটেও অর্থের অপচয় নয়।
ইনস্টাগ্রামে শত শত অনুসারীদের প্রশ্নের জবাবে আরেকটি ভিডিওতে সিনেড জানিয়েছেন, তার শহরের পুলিশ পরিষেবার কথা। 'রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ' অধিক পরিচিত 'মাউন্টিস' নামেই।
দুর্গম আর প্রতিকূল হলেও তুষারশুভ্র নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সিনেড ভালোবাসেন তার শহরকে।
- সূত্র-ডেইলি মেইল