'কুৎসিত ভবনে'র প্রতিযোগিতায় চীনের উদ্ভট সব স্থাপত্য

'কুৎসিত' ভবন বাছাই চলছে চীনে। বার্ষিক কুৎসিত ভবন জরিপের এ বছরের ১২ তম সংস্করণে প্রায় ৯০ প্রতিযোগীকে চিহ্নিত করেছে চীনা স্থাপত্য ওয়েবসাইট আর্কি ডট কম।
ভায়োলিন-আকৃতির গির্জা, একটি "উল্টো" ঘর এবং রাশিয়ান পুতুলের আদলে তৈরি একটি হোটেল এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত। এ তালিকায় আরও রয়েছে আকাশচুম্বী ইমারত, জাদুঘর, হোটেল এবং ক্রীড়া বিষয়ক স্থাপত্য। অস্বাভাবিক আকার এবং কৌশলহীন এসকল ভবন উদ্ভট স্থাপত্যের জন্য দেশের খ্যাতিতে অবদান রেখেছে।
নাম এন্ট্রি করার পাবলিক এ পোলে ইতোমধ্যেই ৩০ হাজারেরও বেশি ভোট পড়েছে। এ তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে আছে ঝেজিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংঝোতে অবস্থিত ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি খিলানযুক্ত গেট। তারপরেই রয়েছে সিচুয়ান প্রদেশের একটি কাচের সেতু যার দু'প্রান্তে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা দৈত্যাকার পুরুষ ও নারী মূর্তি স্থাপিত।
এছাড়া, অন্যান্য মনোনীতদের মধ্যে রয়েছে একটি জাদুঘর, যাকে ইন্সট্যান্ট নুডলসের পাত্রের সাথে তুলনা করা হয়। আরও রয়েছে ১.৫ কিলোমিটার (০.৯ মাইল) জায়গা জুড়ে পরপর অবস্থিত কয়েকটি সাংহাই টাওয়ার, যেগুলো একটি মাত্র ছাদ দিয়ে সংযুক্ত।

ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতার ভোটগ্রহণ চলবে। এ সময় স্থপতি, সমালোচক এবং শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি বিচারক প্যানেল গঠন করা হবে। নয়টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে প্রতিযোগীদেরকে।
ভবনটি আশেপাশের পরিবেশের তুলনায় "অসামঞ্জস্যপূর্ণ" হবে কি না, অথবা এর নকশাটি নকল করা হয়েছে কি না- এসকল বিষয় এ মানদণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
আয়োজকদের মতে, ২০২১ সালের ১০ টি "কুৎসিত" ভবনের চূড়ান্ত নির্বাচন এ বছরের শেষে ঘোষণা করা হবে। এ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত ফলাফল বিবেচনায় জনগণের ভোট ভূমিকা রাখবে ৪০ শতাংশ।
এ প্রতিযোগিতার সাম্প্রতিক বছরগুলোর "বিজয়ী"দের মধ্যে রয়েছে একটি কাঁকড়া আকৃতির সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ছয়টি বিশাল আকৃতির "হীরা"র আদলে তৈরি একটি সেতু।
অতি দ্রুত নগরায়ন ঘটা চীন বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি আকাশচুম্বী ইমারত তৈরি করছে। স্পষ্টতই, দেশটিতে এ ধরনের সন্দেহজনক নকশার অভাব নেই। কিন্তু এ প্রতিযোগিতার জন্য এখন প্রচুর প্রার্থী থাকলেও, দেশের স্থপতিদের বর্তমানে কঠোর বিল্ডিং কোড এবং নগর পরিকল্পনা বিধান মেনে চলতে হয়।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বহুদিন ধরেই উদ্ভট স্থাপত্যের জন্য চীনের খ্যাতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সালে তিনি প্রকাশ্যে বেইজিং সাহিত্য সিম্পোজিয়ামে অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণের সমালোচনা করেছিলেন। তার সরকার তখন থেকেই দেশের আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল।
২০২০ সালের জুনে, চীনের আবাসন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন (এনডিআরসি) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে "কপিক্যাট" ভবন এবং ৫০০ মিটারের (১,৬৪০ ফুট) উঁচু আকাশচুম্বী ইমারত বন্ধ করার আহ্বান জানায়। এমনকি এ বছরের শুরুতেও এনডিআরসি তাদের নির্দেশিত নিষেধাজ্ঞাটি আবার তুলে ধরে। একইসঙ্গে তারা "উপযুক্ত, অর্থনৈতিক, সবুজ এবং সুন্দর" ভবন নির্মাণে জোর দিয়ে "কুৎসিত" ভবন নির্মাণকে "কঠোরভাবে নিষিদ্ধ" করে।
কাউন্সিল অন টল বিল্ডিংস অ্যান্ড আরবান হ্যাবিটেটস' এর মতে, ৫০০ মিটারের বেশি উচ্চতার ভবনগুলোতে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে দেশের স্থপতিদের খুব কমই প্রভাবিত করবে। চীনে এই উচ্চতার মাত্র পাঁচটি আকাশচুম্বী ইমারত রয়েছে।
নতুন এ প্রস্তাবনায় প্রতিটি শহরের জন্য একজন প্রধান স্থপতি নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে, যেসকল ডিজাইনার তাদের পরিকল্পনা মানবে না, তাদেরকে ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ক্রেডিট সিস্টেমও তৈরি হবে।
এছাড়া, ঐতিহাসিক ভবন ভাঙার বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছে সরকার। "চীনা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে" এমন নকশাকে উৎসাহিত করছে তারা। এর আগে ২০১৯ সালে বেইজিংয়ের সবচেয়ে উঁচু আকাশচুম্বী ভবন চীন জুনের আমেরিকান স্থপতিরা সিএনএন'কে বলেছিলেন, ভাইস মেয়রের কার্যালয়ের পরামর্শে এ ভবন নির্মাণের মাঝামাঝি সময়ে সেটির নকশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল তারা। তাদেরকে বলা হয়েছিল "এর নকশা যথেষ্ট চীনা নয়"।

এদিকে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবান পলিসি বিশেষজ্ঞ একজন সিনিয়র আর্কিটেকচার অধ্যাপক ফেই চেনের মতে, নতুন নির্দেশিকা শহরগুলোর জন্য একটি বিস্তৃত কাঠামো প্রদান করে। কিন্তু, সূক্ষ্ম বিবরণগুলোর সমাধান করতে হবে স্থানীর পর্যায়ে।
আবাসন মন্ত্রনালয়ের বিজ্ঞপ্তির সময় তিনি বলেন, "ভাল নকশা কী- সে বিষয়ে স্থপতি এবং শহুরে ডিজাইনাররা বেশ সুনির্দিষ্ট এ নির্দেশনা থেকে উপকৃত হতে পারেন। কিন্তু এটি স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সাথেও সম্পর্কিত হওয়া দরকার। এক প্রসঙ্গে যা কাজ করে তা অন্য ক্ষেত্রে নাও হতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে স্থাপত্যের মানদণ্ডে ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে।
"পূর্ব-উপকূলীয় শহরগুলোতে অথবা আরো উন্নত এলাকায় স্থপতিদের নকশা করার দক্ষতা ভালো, তাই তারা আরো ভালো ভবন তৈরি করে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ শহরগুলোতে আপনি এখনও এমন বিল্ডিং দেখতে পাবেন, যা অন্যদের স্টাইল বা স্থাপত্যশৈলী নকল করে। ফলে এসকল ভবনের নকশা তেমন ভাল হয় না," উল্লেখ করেন ফেই চেন।
- সূত্র: সিএনএন