করোনা প্রতিরোধে হাত ধোয়া আবশ্যক কেন

করোনা বিস্তারের এই ভয়ঙ্কর সময়ে আপনি যেভাবে হাত পরিষ্কার রাখছেন তা সঠিক তো?
এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানেই 'গুড হেলথ' নামক একটি ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সেবা কোম্পানি অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে পরীক্ষা করে। খুব দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শমত ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে হাত ধোয়ার পার্থক্য এর মাধ্যমে উঠে আসে।
এই পরীক্ষায় অংশ নেন ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের একজন সাংবাদিক। তিনি নিজের হাতে 'গ্লো জার্ম' নামের একটি বিশেষ জেল ব্যবহার করেন। এই জেল অতিবেগুনি রশ্মির নিচে আমাদের ত্বকে আটকে থাকা জীবাণু অনুসারে কমবেশি উজ্জ্বলতা ধারণ করে। অর্থাৎ, হাত ধোয়ার পরে যত বেশি উজ্জ্বল দেখাবে জীবাণু সংখ্যা আসলে ততই বেশি।
সেই তুলনায় হাতটি যতো কালো দেখাবে সেটা ততোবেশি পরিষ্কার।

প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছে সাংবাদিকের হাত ধোয়ার আগে। অতিবেগুনি রশ্মির আলোয় 'গ্লো জার্ম' জেলের কারণে হাতটি উজ্জ্বল বর্ণের দেখাচ্ছে। অর্থাৎ তার পুরো হাত জীবাণুর উপস্থিতি খুবই বেশি।

গবেষণা অনুসারে এক চতুর্থাংশ মানুষ এই পদ্ধতিতে নিজের হাত দ্রুত পানি দিয়ে ধুয়ে থাকেন। কিন্তু ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই পদ্ধতি খুব একটা কার্যকর নয়। প্রবাহিত পানিতে দ্রুত ঝাঁকুনি দিয়ে মাত্র তিন সেকেন্ডে হাত ধোয়ার এই প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ জীবাণু দূর হয় না।

সিংহভাগ মানুষ এই সময় নিয়ে হাত ধুয়ে থাকেন। তবে এতটুকু সময়ে জীবাণুরা যায় না। এভাবে ধোয়ার পর বিশেষত হাতের উল্টোপিঠে অনেক জীবাণু থেকে যায়। ছবিতে উল্টো পিঠের পাশাপাশি তার নখের গোড়ায় এবং আঙুলে থাকা বিয়ের আঙটিতেও জীবাণুর ঘনত্ব দেখা যাচ্ছে। ঝাঁকুনি দিয়ে ধুয়ে ফেলার চাইতে বেশি সময় লাগানোয় জীবাণুর উপস্থিতি এখানে কিছুটা কম। তবে এবার হাত ধোয়ার পরে তোয়ালে দিয়ে হাত মোছা হয়েছিল। ভেজা হাতে খুব দ্রুত নতুন করে জীবাণু সংক্রমিত হয়, তাই হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা শুকিয়ে ফেলা জরুরি।

কার্যকরভাবে হাত পরিষ্কারের সবচেয়ে দরকারি অনুষঙ্গ হলো সাবান ব্যবহার। জীবাণু ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকে। সাবান জীবাণুকে মেরে ফেলে না, তবে সেগুলোকে ত্বক থেকে সরাতে সাহায্য করে। সাবানের পিচ্ছিল ফেনার আণুবীক্ষণিক কণাগুলোর এক অংশ পানির কণার সঙ্গে মিশে থাকে আরেক অংশ মেশে ত্বকে থাকা ধুলোবালির কণার সঙ্গে। তাই সবান লাগিয়ে হাত ঘষলে ধুলি ও ময়লার কণার অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়। পরিচ্ছন্নতা বিশেষজ্ঞ লিসা অ্যাকারলি পরামর্শ দেন, সাবান লাগিয়ে হাতের তালুর সঙ্গে নখের মাথা ঘষে ঘষে সেগুলোকেও পরিষ্কার করতে হবে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পরামর্শ অনুসারে সাবান দিয়ে ঠিক এতটা সময় নিয়েই হাত ধুতে হবে। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, এখন হাতে উজ্জ্বল সাদা অংশ বা জীবাণুর উপস্থিতি অনেকটাই কম। এখন শুধু হাতের উল্টো পিঠের চামড়ার কিছু খাঁজ এবং নখের উপরিভাগেই কিছু ময়লার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। লিসা অ্যাকারলি বলেন, হাতের এসব অংশকে পরিষ্কার করতে হলে প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় আপনাকে বেশ সাবধানতার সঙ্গে সময় নিয়ে প্রত্যেকটি জায়গা পরিষ্কার করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) ঠিক এই পরিমাণ সময় নিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। আগের ছবির সঙ্গে এর ফলে সৃষ্ট পার্থক্য সহজেই দৃশ্যমান। এখন হাতে সাদা অংশের পরিমাণ একদমই কমে গেছে। এরপরেও অবশ্য হাতে কিছু জীবাণু থাকা সাদা অংশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাহলে কি আরও বেশিক্ষণ ধরে হাত ধোয়া উচিত? লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর ভ্যাল কার্টিসের মতে, এতে করে জীবাণু কমবে তা নিশ্চিত, তবে ৩০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়াটাই যথেষ্ট। কারণ বেশিরভাগ জীবাণু দূর করাটাই আসলে এর মূল উদ্দেশ্য।