চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভা
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রক্ষার দাবিতে চুনতি ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসসংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন ও প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে 'চুনতি রক্ষায় আমরা' ও ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন।
আইইউসিএন রেড লিস্টে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত এশিয়ান হাতির অন্যতম 'প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র' এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বন্য এশিয়ান হাতি যাতায়াতের অন্যতম করিডর হিসাবে স্বীকৃত চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আশঙ্কাজনকভাবে বিগত বছরগুলোতে প্রাকৃতিক গর্জন বনাঞ্চল উজাড়, পাহাড় কাটা, প্রাকৃতিক হ্রদ ও এশিয় বন্যহাতির প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট, ভূগর্ভস্থ পানিপ্রবাহ নষ্ট করে বালু উত্তোলন, কোর জোনে অবৈধ মানব বসতি স্থাপন, সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম, অভয়ারণ্যের ভেতর সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস এবং বনবিভাগের চরম দুর্নীতির ফলে এই অভয়ারণ্যের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
তারা বলেন, বন সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘের পুরস্কারজয়ী এই বনে কাটা হয়েছে ৮ লাখ গাছ। অভয়ারণ্যের কোর জোনের বুকচিরে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে বসানো হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। বনের অভ্যন্তরে এবং অভয়ারণ্যের আশপাশে ৪২টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, বনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে করাতকল ও আসবাবের অসংখ্য দোকান; বনের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বাকখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ২০ কিলোমিটারের মধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
উপস্থিত বক্তা ও পরিবেশকর্মীরা স্থানীয় জনপ্রশাসন ও বন বিভাগের প্রতি এই অভয়ারণ্য সংরক্ষণের দাবি জানান। এ সময় চুনতি বন ধ্বংসকারীদের তালিকা তৈরি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুনতি অভয়ারণ্যের কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির পুনর্গঠন, পাহাড় কাটা, বালু ও কাঠপাচার, বন্যপ্রাণী চোরাচালান বন্ধে আইনপ্রয়োগে কঠোর অবস্থান এবং দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়। পাহাড় ও বনখেকো দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনসাধারণ ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন সংরক্ষক জনাব মোল্যা রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন 'চুনতি রক্ষায় আমরা'-এর সমন্বয়ক সানজিদা রহমান, ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া, চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কমকর্তা রফিকুল ইসলামসহ বনবিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ।