ছাত্র-জনতার ঐক্যই পারে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধরে রাখতে: ‘জনভাষ্য’-এর আয়োজিত সংলাপ
শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছে জুলাই আন্দোলনের নাগরিক অংশীজনদের প্ল্যাটফর্ম 'জনভাষ্য'। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তন, লেকচার থিয়েটার হলে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সর্বজনের নীতিভাবনা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করা জনভাষ্যের প্রথম সংলাপের বিষয় ছিল 'গণঅভ্যুত্থা পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাস এবং ছাত্র জনতার প্রত্যাশার অভিমুখ'।
এই সংলাপে আন্দোলনরত বিভিন্ন পাবলিক, প্রাইভেট ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শ্রমিক, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা অংশ নেন।
সংলাপে বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান উল জাব্বার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী নাসিম আবির, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির শিক্ষার্থী মো. সামান, ইউল্যাবের শিক্ষার্থী ফয়সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সামি আবদুল্লাহ, ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মাইন আহমেদ, গার্মেন্টসকর্মী শাজাহান এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শফিকুর রহমান।
এছাড়াও এই সংলাপে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, শিক্ষা আন্দোলনের সংগঠক ও লেখক রাখাল রাহা, শিল্পী অমল আকাশ, নর্থ সা্উথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শর্মী হোসেন, অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার লিপি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মঈন জালাল চৌধুরি এবং লেখক ও চিন্তক তুহিন খান।
সংলাপের শুরুতেই জনভাষ্য-এর ঘোষণাপত্র এবং ধারণাপত্র পাঠ করেন সাংবাদিক ও গবেষক আরিফ রহমান এবং কবি ও মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন ব্লগার ও মানবাধিকারকর্মী কৌশিক আহমেদ।
সভায় বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাসবিষয়ক কিছু পর্যালোচনা উপস্থাপন করেছেন এবং গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট থেকে তৈরি হওয়া নতুন রাষ্ট্রে কী কী সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়ে আলাপ করেন।
বক্তারা বলেন, আমরা এখনও গণঅভ্যুত্থানের একটি চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছি। আমরা যে বৈষম্যমূলক সমাজ নির্মাণের কথা ভাবছি, তার মৌল সংস্কার কোনো টোটকা প্রক্রিয়ায় সম্ভব না।
তারা বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে ন্যূনতম জনপ্রত্যাশা ছিল জননিরাপত্তা বিষয়টি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনগণের রাজনৈতিক বোধের অভাবে কোনো রকম সংলাপ ছাড়াই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়ে যায়। আন্দোলন-পরবর্তী আশু দাবি ছিল জুলাই হতাহতের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতর একধরনের অলসতা এবং জনসম্পৃক্ততার অভাব দেখা গিয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়িত হলেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো বিলুপ্ত হয় না। গত ১৫ বছর ধরে যে শক্তিশালী কালচারাল ন্যারেটিভ ফ্যাসিজম তৈরি হয়েছে, তাকে পরাহত করতে হবে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে জনগণের কালচারাল ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে।
প্যানেলিস্টের আইনজীবীরা বলেন, কলোনিয়াল আইনব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইন গুরুত্বপূর্ণ টুলস। বর্তমান বাংলাদেশে যে ৫,০০০ আইন বলবৎ রয়েছে, তা ১০০ বছরেও রাষ্ট্র কাঠামোর ফ্যাসিজমকে বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
সভায় বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত ফাংশনাল করা, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ সরকারকে বিচারের আওতায় আনা, ফ্যাসিজম যাতে আর ফিরে না আসে সেজন্য রাষ্ট্র সংস্কার করা, আইনি কাঠামোকে সংস্কার করা, বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতার জায়গায় স্পষ্ট করা, সংবিধানকে সংস্কার করা এবং দাসসুলভ গণমাধ্যমের চরিত্রকে বদলানোর বিভিন্ন দাবি জানান।
এ সংলাপে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মানুষের ভুমিকা উঠে আসে। জুলাই আন্দোলনে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। সংলাপ থেকে শ্রমিকদের জন-আকাঙ্ক্ষার পাশে ছাত্রজনতার ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান করা হয়। একইসঙ্গে দ্রুত জুলাই হতাহতের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, শিক্ষাঙ্গন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথাও সংলাপে বলা হয়।