প্রয়াত সিটি অভ জয়ে’র লেখক ডমিনিক ল্যাপিয়ের, বয়স হয়েছিল ৯১ বছর
ভারতের প্রতি অসীম আগ্রহ আর ভালোবাসাস্বরূপ পরিচিতি পাওয়া ফরাসি সাহিত্যিক ডোমিনিক ল্যাপিয়ের, যার কয়েক মিলিয়ন কপি বই বিক্রি হয়েছে, মারা গিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী। খবর দ্য হিন্দুর।
রবিবার ফরাসি সংবাদপত্র ভার-মাতিনে এ খবর জানান ল্যাপিয়েরের স্ত্রী অ্যালিয়ে স্পিটজার। তিনি আরও যোগ করেন, "ডোমিনিককে আর কষ্ট পেতে না দেখে তিনি শান্তিতে রয়েছেন।"
১৯৩১ সালের ৩০ জুলাই ফ্রান্সের শ্যাতেলালিয়নে জন্মগ্রহণ করা ল্যাপিয়ের মার্কিন লেখক ল্যারি কলিন্সের সাথে ৬টি বই লিখেছেন, যেগুলো প্রায় ৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'ইজ প্যারিস বার্নিং?'
১৯৬৫ সালে প্রকাশিত এই নন-ফিকশন বইটিতে ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ফরাসি রাজধানীর অবস্থা বর্ণনা করেছেন, যখন নাৎসি জার্মানদের হাত থেকে প্যারিস মুক্ত হয়। পরবর্তীতে এই বইটি নিয়ে রেনে ক্লিমেন্ট চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন।
তার ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হওয়া 'সিটি অভ জয়', যেটি কলকাতার একজন রিকশাওয়ালার সংগ্রামী জীবনের ওপর ভিত্তি করে লেখা, ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। অনূদিত হয় ৩০টিরও বেশি ভাষায়। ১৯৯২ সালে বইটির ওপর ভিত্তি করে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়, যাতে অভিনয় করেন প্যাট্রিক সোয়েজ। বইটির সাফল্যের পর একই নামে একটি এনজিও খোলেন এবং বইটি থেকে পাওয়া রয়্যালিটি সেখানে দান করেন ল্যাপিয়ের।
২০০৫ সালে তিনি ঘোষণা করেন, তার রয়্যালিটি এবং পাঠকদের কাছে পাওয়া দানের মাধ্যমে ২৪ বছরে দশ লক্ষ যক্ষারোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে এবং ৯ হাজার কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত শিশুকে সাহায্য করা সম্ভব হয়েছে। ল্যাপিয়েরের ভাষ্যানুযায়ী ভারতের দুস্থদের সাহায্যের জন্য প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মভূষণে ভূষিত করা হয়।
ল্যারি কলিন্সের সাথে যৌথভাবে 'ইজ প্যারিস বার্নিং' রচনা করে সাফল্য পাওয়ার পর তারা দুজনে মিলে আরও ৫টি বই লেখেন: 'অর আই'ল ড্রেস ইউ ইন মার্নিং (১৯৭৫)', 'ও জেরুজালেম (১৯৭২)', 'ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট (১৯৭৫)', 'দ্য ফিফথ হর্সম্যান (১৯৮০)' এবং থ্রিলার 'ইজ নিউ ইয়র্ক বার্নিং?'
২০১২ সালের জুন মাসে তিনি পড়ে গিয়ে কোমায় চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চললেও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। তিনি পরবর্তীতে আর বই না লিখলেও তার লেখা বই লক্ষ লক্ষ পাঠকের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।