ইউএস ট্রেড শো: খাদ্য ও প্রসাধনী পণ্যে বেশি আগ্রহী দর্শনার্থীরা
প্রশাধনী, জ্বালানি, ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা, খাদ্য ও পানীয়সহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০ টি ব্রান্ডের পণ্য ও সেবা নিয়ে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে চলছে তিনদিনব্যাপী ইউএস ট্রেড শো। এতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করেছে।
মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য এবং সেবা প্রদর্শনের জন্য মেলার আয়োজন করা হলেও বেশ কয়েকটি প্রসাধনী, খাদ্য ও পানীয় স্টল নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্রিও করছে মেলায়।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আজ শনিবার পর্যন্ত। মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্রান্ডগুলো জানিয়েছে, তাদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি দর্শনার্থী মেলাতে আসছেন এবং ঘুরে দেখছেন।
এদিকে দর্শনার্থীরাও জানিয়েছেন, একই ছাদের নিচে যুক্তরাষ্ট্রের এতোগুলো ব্রান্ড একসঙ্গে পেয়ে তারাও পণ্য ও সেবা যাচাই করে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই নিজেদের পছেন্দের পণ্য কিনছেন এবং মেলাতে দেওয়া ছাড় লুফে নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা, উচ্চশিক্ষার সুযোগ, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে ইউএসএইডের কর্মকাণ্ড ও মেধাস্বত্ব বিষয়ে শুক্রবার মেলায় সেমিনারের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
২৮তম ইউএস ট্রেড শো এর দ্বিতীয় দিনে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই ট্রেড শো প্রাঙ্গনে বাড়তে থাকে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড়। তবে অধিকাংশ দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায় প্রশাধনী ও খাবারের স্টলগুলোতে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের স্টলে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায় ইউএসএ ভিসা প্রসেসের বিষয়গুলো জানতে।
বিভিন্ন প্রসাধনীর স্টলে একটি পণ্যের সঙ্গে আর একটি পণ্য ফ্রি দেওয়াসহ ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রসাধনীতে। এছাড়া, বিনামূল্যে ত্বক পরীক্ষা করারও সুযোগ রয়েছে শো'তে।
ইউএস কোম্পানি রিমার্ক-এর স্টলে চারটি ব্র্যান্ড সিওডিল, নিওর, ব্লেজ ও'স্কিন অ্যান্ড হারলান-এর পণ্য মেলাতে প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে। তারা মেলা উপলক্ষ্যে ২০ শতাংশ ছাড়সহ স্ক্রিন অ্যানালাইজার দিয়ে বিনামূল্যে ত্বক পরীক্ষা করছে।
রিমার্ক এইচবি লিমিটেডের কসমেটিকস অ্যান্ড স্কিন কেয়ারের ডেপুটি ডিরেক্টর আসিফ ইমরান রুবেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কে বলেন, "আমরা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করি প্রায় দুই বছর আগে, কিন্তু ৬ মাস হলো অফিশিয়াল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রোডাক্ট নিয়ে আসছি। নতুন হিসেবে মেলাতে ভালো সাড়া পাচ্ছি। সারাক্ষণই স্টলে ভিড় লেগে থাকছে। আমরা আমাদের পণ্যে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়াসহ একদম ফ্রিতে স্ক্রিন অ্যানালাইজ করে দিচ্ছি। সেই অনুযায়ী গ্রাহক প্রসাধনী ব্যবহার করবেন।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা সেলসে নজর দিচ্ছি না, প্রচারনার জন্য মেলাতে অংশ নিয়েছি। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পণ্য বিক্রি হচ্ছে।"
কালারম্যাক্স ইউএসএ মেলা উপলক্ষ্যে তাদের যেকোনো প্রসাধনী পণ্য কিনলে একটির সঙ্গে আরেকটি ফ্রি দিচ্ছে।
স্টলের ভলান্টিয়ার সাদিয়া ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "মেলাতে প্রদর্শনীর উদ্যেশ্যে আসলেও প্রত্যাশার থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন আইটেমের মধ্যে আমাদের লিপস্টিক বিক্রি হচ্ছে বেশি।"
হিডবিউটি ব্র্যান্ডের অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার আশরাফ আলী টিবিএসকে বলেন, "আমরা সব প্রডাক্টের ওপর ২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ জেল, লোশনের প্রতি। বাংলাদেশে আমাদের কোম্পানি বৃহস্পতিবারই যাত্রা শুরু করেছে।"
মেলায় এসে ঘুরে ঘুরে কসমেটিকস দেখছিলেন হুমায়রা বেগম। টিবিএসকে তিনি বলেন, "আমি বহুদিন ধরেই আমেরিকার প্রসাধনী ব্যবহার করছি। প্রতি বছরের মেলাতেই আমি আসার চেষ্টা করি। এসে একটা বিষয়ই ভালো লাগে, বিভিন্ন ব্র্যান্ড একসঙ্গে পাওয়া যায়। এছাড়া নতুন নতুন ব্র্যান্ড ও পণ্য সম্পর্কেও জানতে পারি।"
ইউএস ফুড মার্ট-এর ভলান্টিয়ার মাইশা ইসলাম অন্তু টিবিএসকে বলেন, "মেলাতে আমরা আমাদের চকলেট, পিনাট, বিভিন্ন প্রসাধনীসহ সকল পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। সারা দিনই স্টলে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। প্রসাধনীর মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে লোশন ও শ্যাম্পু এবং খাবারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে চকলেট।"
বার্গার কিং-এর স্টলের টিম মেম্বার রাসেল হাওলাদার টিবিএসকে বলেন, "আমরা মেলাতে বিক্রি করছি না। মেলায় এসে রেজিস্টেশন করলে আমরা তার একবারের অর্ডারে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্টের অফার দিচ্ছি। ঢাকাতে আমাদের ৮ টি আউটলেট রয়েছে।"
এছাড়াও মেলায় কোকাকোলা, মোবিল, ফরচুনা গ্রিন সিটি, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন সেবা ও পণ্যের প্রদর্শন করছে।
শেভরন বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের কমিউনিকেশন ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমরা বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকে কাজ করে আসছি। দেশের তিনটি গ্যাস ফিল্ড এ বর্তমানে আমাদের কার্যক্রম চলছে। মেলাতে আমরা গ্যাস উত্তোলনের বিভিন্ন ধাপ এবং পুরো প্রক্রিয়া প্রদর্শন করছি।"
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ট্রেড শো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে। এতে প্রবেশমূল্য রাখা হচ্ছে ৩০ টাকা। তবে পরিচয়পত্র দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারছেন। মেলায় ৪৪টি দেশি-বিদেশি স্টলে একশোরও বেশি পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) মার্কিন পণ্যের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
আজ শনিবার মেলার শেষ দিন মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা ক্রস বর্ডার বিজনেস বা আন্তঃসীমান্ত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মেধা সম্পদ অধিকারের (ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি রাইটস) প্রভাব সম্পর্কিত একটি সেমিনারে যোগ দেবেন।